প্রকাশিত: ২৪/০৬/২০২২ ৮:০০ এএম

নুপা আলম ::
এ যেন নেতৃত্ব না মানার প্রবণতা। আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে একে একে সংগঠিত হচ্ছে হত্যা। আর হত্যার টার্গেটে রয়েছে নেতারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

সচেতন মহল বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতৃত্ব না মানার প্রবণতা; অপরাধের প্রতিবন্ধকতা আধিপত্য বিস্তারের কারণে এসব খুন সংগঠিত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকারের কথা বলতে না পারেন তার জন্য এসব টার্গেট খুন বলে মত রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞদের। এর পেছনে ভিন্ন কোন মহলের ইন্ধনও থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এর পর থেকে গত মে মাস পর্যন্ত ১৪ ধরণের অপরাধে ১৯০৩ টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে খুনের ঘটনা ৯৩ টি। এর বাইরে চলতি জুন মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ক্যাম্পে খুন হয়েছে আরো ৪ টি। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৭ টি। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে সম্প্রতি সংঘটিত খুন হওয়া প্রায় সকলেই রোহিঙ্গা নেতা হিসেবে পরিচিত।
চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১২ টি। যার মধ্যে চলতি জুন মাসে ৪ টি খুনের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পের ব্লক ভিত্তিক ২ নেতা এবং একজন স্বেচ্ছাসেবক। বারবার বলা হচ্ছে ক্যাম্পে
আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এসব খুনের ঘটনা হচ্ছে। তবে ভিন্ন কথা বলতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিশিষ্টজনরা।

অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। যিনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে হয়ে উঠেছিলেন রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র হিসেবে। কিন্তু ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন তিনি। গত ১৩ জুন আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। যেখানে বলা হয়েছে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠায় মেনে নিতে না পেরে রোহিঙ্গাদেরই একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
তিনি জানান, করোনা কালিন সময়ে ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সীমিত ছিল। ওই সময় সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। এরপর থেকে ক্যাম্পে অপরাধের প্রবণতা ভিন্ন দিকে যাওয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে মুহিবুল্লাহ
হত্যাকাণ্ডটি সুনিদিষ্ট টাগের্ট কিলিং হিসেবে ধরা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র হয়ে উঠা, হওয়ার চেষ্টা এমন মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় খুন করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো নিজেদের উদ্যোগে বা আধিপত্য বিস্তারের জন্য খুন করছেন এমনটা মনে হচ্ছে না। এখানে ভিন্ন কোন মহলের ইন্ধন থাকতে পারে।
উখিয়া কুতুপালং এলাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, সম্প্রতি ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনগন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ক্যাম্প ভিত্তিক মাঝি (নেতা), সাব- মাঝি, স্বেচ্ছাসেবকদের খুন করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান ঘোষণা করে যাচ্ছে।
কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, রোহিঙ্গারা স্বাভাবিকভাবে নেতা মানতে চান না। কেউ নেতা হয়ে উঠবে বা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে তা না মানার প্রবণতা তাদের রয়েছে। এ সুযোগকে কাজ লাগিয়ে নেতৃত্বশূণ্য করার কোন মিশন সশস্ত্র গোষ্ঠি বা ভিন্ন কোন মহল করছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরী।
কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক সংগঠক দীপক শর্মা দীপু জানান, শুধুমাত্র আধিপত্য বিস্তারের কারণে এসব খুন সংগঠিত হচ্ছে এটা বলা যাবে না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেতা হয়ে অধিকারের কথা বলতে না দেয়ার মিশনে কোন মহল নেমেছে কিনা তাও দেখা জরুরী।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ এপিবিএন-এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান জানান, ক্যাম্পের নিরাপত্তা রক্ষায় আগের চেয়ে টহল অনেক বাড়ানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক তৈরী করে তথ্য সংগ্রহ, অপরাধীদের আটক করা হচ্ছে। ফলে অনেক সময় এসব কারণে অপরাধীরা ক্ষিপ্তও হয়। তবে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় তারা সব সময় কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান অবশ‍্য বলেন, ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে তৈরী হয়েছে সচেতনতা। আগে অপরাধ সংঘটিত হলে মামলা করতে আসতো না বা আসলে আসামির নাম ঠিকানা উল্লেখ করতে ভয় পেতেন। বর্তমানে রোহিঙ্গারা মামলার বাদি হচ্ছেন। আসামি নাম ঠিকানা দিচ্ছে। যে সব মামলা হচ্ছে তা গুরুত্বের সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এপিবিএন এর ৩ টি ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি জেলা পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পে তৎপরতা বাড়িয়েছে। ফলে উদ্বেগের কোন কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। সৌজন্যে, দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চাচি শাশুড়িকে মা বানিয়ে বাংলাদেশি হতে চান রোহিঙ্গা যুবক!

রোহিঙ্গা যুবক সাহাব উদ্দিন (২৪) বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি নারী খুরশিদা আক্তারকে। তাদের ঘরে জন্ম নিয়েছে ...

সেন্ট মার্টিনে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ ...

টেকনাফে বনজ সম্পদ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে ধমীর্য় ভূমিকা শীষক সভা অনুষ্ঠিত

কক্সবাজারের টেকনাফে “বনজ সম্পদ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে ধমীর্য়  ও সামাজিক নেতাদের ভূমিকায়” শীষর্ক সভা অনুষ্ঠিত ...